বদরুল ইসলাম বিপ্লব, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রাণপুরুষ বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী মোজাম্মেল হক বাবলু (৬৮) আর নেই (ইন্না লিল্লাাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন)। মঙ্গলবার দিনাজপুর এম রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রীসহ অসংথ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।
”আবার যদি দেখা হয় সেই পুরনো কথা গুলো মনে করে শুধু শুধু দুঃখ পেয়ো না “আশির দশকে ঢাকা বেতারের এই আধুনিক গানের শিল্পী মোজাম্মেল হক বাবলু।
বুধবার বিকেলে জেলার রানীশংকৈল ডিগ্রী কলেজ মাঠে নামাজে জানাজা শেষে বন্দর গোরস্তানে তাকে দাফন করা হয়।
১৯৫২ সালে তিনি পশ্চিমবাংলার রায়গঞ্জে শংকরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । ৪ ভাই ২ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। শিশুকাল থেকেই তাঁর ছিল গানের প্রতি তুমুল ঝোঁক। টেবিল বাজিয়ে গান গাইতেন তিন। স্কুলেও যেতেন । কিন্তু খুব বেশিদিন লেখাপড়া করতে পারেননি তিনি। চোখের সমস্যার কারণে তৃতীয় শ্রেণির গন্ডি পার হতে পারেননি তিনি।
চোখের সমস্যার কারণে লেখাপড়া করতে না পারলেও তার সঙ্গীত চর্চা থেমে থাকে নি। ১৯৬৮ সালে বাল্যকালেই অর্জন করেন তৎকালীন রেডিও পাকিস্তান রংপুরে নিয়মিত শিল্পী হিসেবে নজরুলগীতি পরিবেশনের সুযোগ।
স্বাধীনতা পরবর্তী কালে ১৯৭৩-৭৪ সালে তিনি পীরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের পূর্ব পাশে বসবাস করতেন এবং পীরগঞ্জের ছেলে মেয়েদের গান শেখাতেন। ১৯৭৫-৭৬ সাল থেকে তিনি দিনাজপুরে থেকে সঙ্গীত চর্চা করতেন । আশির দশকে তিনি ফিরে আসেন রাণীশংকৈলে। তাঁরই নেতৃত্বে ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রাণীশংকৈল সংগীত বিদ্যালয়। তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। পরবর্তীতে ৯০ দশকের শেষভাগে ঠাকুরগাঁও বেতার স্থাপিত হলে তিনি সেখানে সংগীত প্রযোজক হিসেবে যোগদান করেন। ঠাকুরগাঁওয়ে থাকাকালীন সময়ে “সুর সপ্তক ” নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন । তিনি সুর সপ্তক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ছিলেন। এছাড়াও অসংখ্য সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থেকে সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে দৃপ্ততার সাথে পদচারণা করতেন।
১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিয়মিত শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ হয় তাঁর। মূলত: তিনি নজরুলগীতি ও আধুনিক গানের শিল্পী হলেও অন্যান্য গান চমৎকারভাবে গাইতে পারতেন। তাঁর কণ্ঠে মান্নাদের গান শুনে মন্ত্রমুগ্ধের মতো দর্শক শ্রোতা বসে থাকতেন।
চোখের দৃষ্টিশক্তি না থাকলেও তিনি তবলা, হারমোনিয়াম, গিটার ও অরগ্যান অত্যন্ত দক্ষতার সাথে চমৎকারভাবে বাজাতে পারতেন। যে কোন মিউজিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট পেলে তিনি সেটা নিজ দক্ষতায় বাজিয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করতেন। তিনি প্রখর স্মৃতি শক্তির অধিকারী ছিলেন। দূর থেকে তাঁর চেনা ব্যক্তির কণ্ঠস্বর দীর্ঘদিন পর সামান্য শুনেও বলে দিতে পারতেন তার নাম। কখনো কখনো হাঁটার শব্দ কানে শুনেও বলে দিতে পারতেন কে তার কাছে এলো।
এই গুণী শিল্পীর মৃত্যুতে জেলা প্রশাসক ড. কামরুজ্জামান সেলিম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি অনুপম মনি সাধারণ সম্পাদক পার্থ সারথী দাস শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।